* বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো এমন অনেকে জড়িত, যা আমরা জানি। শেষ ইচ্ছা ছিল এগুলো বলার কিন্তু বলতে চাই না : ল্যান্সার মহিউদ্দিন ও আর্টিলারি মহিউদ্দিনডেডলাইন ১২:০১ পারভেজ খানকোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে কারাবিধি অনুযায়ী তাকে তওবা পড়ানো হয় (মুসলমান হলে)। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পাঁচ ঘাতক তওবা পড়তে অস্বীকৃতি জানায়। তাই তওবা ছাড়াই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসির আসামিদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার শেষ ইচ্ছা কী; পছন্দের কোনো খাবার খেতে চায় কি না; শেষবারের মতো কিছু বলার আছে কি না। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার আগেও পাঁচ আসামির কাছে এসব জানতে চেয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাঁচ আসামির সবাই বলেছে, এসব কিছুর ইচ্ছা তাদের নেই। উপরন্তু দুজন বলেছে, এসব করে আর বলে লাভ কী? কারণ তাদের ভাষায়, শাস্তি দেওয়ার নামে যা করা হচ্ছে, তা অবৈধ।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তারা এমন কিছু জানে, যা প্রকাশ করলে অনেকের মুখোশ খুলে যাবে। বের হয়ে আসবে থলের বিড়াল। কিন্তু মরার আগে আর কাউকে তারা বিব্রত করতে চায় না। তবে একজন কিছু চেয়েছিল। তার চাওয়া ছিল মৃত্যুর আগে নয়, মৃত্যুর পর যেন তার লাশ হেলিকপ্টারে করে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। তার স্বজনরাও কারাগারে মৌখিকভাবে এই আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু লিখিত কোনো আবেদন করেননি বলে তা সম্ভব হয়নি।
এ রকম অনেক নাটকীয় ঘটনার পর বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকরের পালা। কারাগারের বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তওবায় অনীহা : বুধবার রাত ১১টার দিকে কারা কর্মকর্তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পুকুরপাড় মসজিদের ইমাম মনির হোসেনকে রজনীগন্ধা সেলে নিয়ে যান পাঁচ বন্দিকে তওবা পড়াতে। কিন্তু ইমামসহ কারা কর্মকর্তাদের অবাক করে দিয়ে পাঁচ বন্দির কেউই তওবা পড়তে রাজি হয়নি। তারা বলেছে, আমরা নিজেরাই তওবা পড়তে পারি। কোনো আনুষ্ঠানিকতার তওবা বা ইমামের প্রয়োজন নেই। এরপর ইমাম সাহেব তাঁর মতো করে তওবা পাঠ করে শোনান।
শেষ ইচ্ছা বলে কিছু নেই : শেষ ইচ্ছার কথা বলা হলে পাঁচ বন্দির সবাই বলেছে, তাদের কোনো শেষ ইচ্ছা নেই। লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি) ও মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) বলেন, শাস্তি দেওয়ার নামে যা করা হচ্ছে, তা অবৈধ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো এমন অনেকে জড়িত, যা আমরা জানি। শেষ ইচ্ছা ছিল এগুলো বলার, কিন্তু তা বলতে চাই না। বললে অনেক রাজনীতিক রাঘব বোয়ালের নাম প্রকাশ পাবে। বের হয়ে আসবে থলের বিড়াল। মারা যাওয়ার আগে আর কাউকে বিপদে বা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চাই না।
মেজর (অব.) বজলুল হুদা বলে, 'আমার শেষ ইচ্ছা যা, তা কারা কর্মকর্তাদের সামনেই এর আগে স্ত্রীকে বলেছি। স্ত্রীকে বলেছি, জীবন তো আর এমন হওয়ার কথা ছিল না। তাকে আরো বলেছি, পরকালে তার সঙ্গে আবার দেখা হবে। সবাই দোয়া করবেন, যাতে আমি পরকালে স্ত্রীর দেখা পাই।'
শেষ ইচ্ছার কথা না জানালেও সবাই বলেছে, তাদের কবর যেন স্বজনদের পাশে দেওয়া হয়।
খাবারে পছন্দ নেই : বন্দিদের বলা হয়েছিল তাদের বিশেষ কিছু খেতে ইচ্ছা করছে কি না। তারা বিশেষ পছন্দের কোনো খাবারের ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। ফলে রুটিন হিসেবেই তাদের শেষবেলার খাবার দেওয়া হয়। এই তালিকায় ছিল ভাত, রুটি, ডাল, গরুর মাংস, আলু-টমেটো-ফুলকপি দিয়ে তৈরি সবজি আর গরুর দুধ। সবাই এসব খেয়েছে, তবে পরিমাণে অল্প। বিকেলে অবশ্য তাদের নিজেদের টাকা থেকেই (প্রিজনার্স ক্যাশ) সিঙাড়া, পুরি ও কেক এনে খায়। তবে সরবরাহ করার আগে প্রতিটি খাবারই কারা কর্মকর্তারা পরীক্ষা করে দিতেন।
রায় শোনার পরও অবিচল : ওই দিন রাত ১০টার দিকে স্বজনরা চলে যাওয়ার পরপরই সোয়া ১০টায় কারা কর্মকর্তারা সেলে গিয়ে বন্দিদের জানান, আজই তাদের সাজা কার্যকর করা হবে। কিন্তু কাউকে বিচলিত হতে দেখা যায়নি। মনে হয়েছে, এ রকম প্রস্তুতি তারা নিয়েই রেখেছিল। কেউ কোনো কান্নাকাটিও করেনি। যা করেছে তা স্বজনদের সামনে এবং তাঁদের কাছে পেয়ে। অবশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংবাদ পেয়ে প্রায় সবাই বলেছে, তারা অপরাধী না। ন্যায্য বিচার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
গোসল-পোশাক : মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে সবাইকে গোসল করতে বলা হয়। সবাই গোসল করতে রাজি হলেও লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান রাজি হয়নি। তার গোসলের ইচ্ছা বা প্রয়োজন নেই বলে সে জানায়। সেলের পাশেই গোসলখানা। চার বন্দি মগে করে নিজেরাই পানি ঢেলে গোসল করে। এ সময় কারা মসজিদের ইমামও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর উপস্থিতির প্রায় পুরো সময়ই দোয়া-দরুদ পড়ে গেছেন।
বন্দিরা অনেক সময় তাদের সাধারণ পোশাক পরত। তবে গোসলের পর সবাইকে কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরতে বলা হয়। তারা সে পোশাকই পরে। এ সময় কেউই কোনো আপত্তি করেনি। এই পোশাক হচ্ছে সাদা-কালো ডোরাকাটা ফতুয়া ধরনের পাঞ্জাবি আর পায়জামা।
ফাঁসির মঞ্চ : রজনীগন্ধা সেলের মাত্র কয়েক গজের মধ্যেই ফাঁসির মঞ্চ। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়। কাপড় দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় মঞ্চ। ঝোলানো হয় ম্যানিলা রোপ বা ফাঁসির দড়ি। চারপাশে জ্বালানো হয় উচ্চক্ষমতার লাইট। মঞ্চের অদূরে সারি সারি সাজানো হয় চেয়ার। এই চেয়ারে এসে একে একে বসতে থাকে ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট আর চিকিৎসকের দল। কারা কর্মকর্তাদের কয়েকজন জল্লাদদের সঙ্গে নিয়ে ফাঁসি কার্যকর করার হাতল বা লিভার টেনে পরখ করে দেখেন পায়ের নিচের পাটাতন একপাশ খুলে নিচে ঝুলে যায় কি না। পাটাতনের নিচেই ১০ ফুট গভীর কূপ। রশিতে মাখানো হয় বিশেষ এক ধরনের তেল। এক এক করে মঞ্চের পাশে সারিবদ্ধ করে রাখা চেয়ারে এসে বসেন ঢাকার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মহা কারা পরিদর্শক, উপ মহা কারা পরিদর্শক, ঢাকার সিভিল সার্জন, সহকারী সিভিল সার্জন, কারাগারের তিন চিকিৎসকসহ ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা। মঞ্চের অদূরে আরেক পাশে অবস্থান নেয় ১২ জন জল্লাদ। ১২ জন শসস্ত্র কারারক্ষী ও নিরাপত্তা-আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক সদস্যও এ সময় উপস্থিত হন। ফাঁসি কার্যকর করার সময় উপস্থিতির সংখ্যা ছিল এক শর ওপর।
এক এক করে পালা : রাত সাড়ে ১১টার দিকে কারা কর্মকর্তারা যান রজনীগন্ধা সেলে। কর্মকর্তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে একদল যান ৬ নম্বর কক্ষে কর্নেল ফারুকের কাছে। এ সময় সে পায়চারি করছিল। আনুষ্ঠানিক কিছু কথা শেষে কারা কর্মকর্তারা হাতকড়া দিয়ে কর্নেল ফারুককে দুই হাত পেছন করে বেঁধে ফেলেন। এরপর তার মুখ ঢেকে ফেলা হয় মোটা কালো কাপড়ের তৈরি মুখোশ বা 'যমটুপি' দিয়ে। এ সময়ও ইমাম সাহেব উপস্থিত থেকে তাদের তওবা পড়ানোর চেষ্টা করেন এবং দোয়া-দরুদ পড়েন।
কারা কর্মকর্তাদের আরেক দল যায় ৭ নম্বর কক্ষে লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের কাছে। তাকেও একইভাবে প্রস্তুত করা হয়। এ সময় শাহরিয়ার বলে, 'আমাকে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন দেন, কিছুই বলার নেই। কারণ আপনারা ফাঁসি কার্যকরের কোনো নিয়মই মানেননি।'
ডেডলাইন রাত ১২: ০১ : সেল থেকে মঞ্চের দিকে আনা হয় কর্নেল ফারুক আর শাহরিয়ারকে। তারা হেঁটে আসছিল। তবে অনেকটা জোর করেই টেনে আনা হাচ্ছিল বলে মনে হয়েছে। ১২ টা ১ মিনিটে প্রথমে মঞ্চে ওঠানো হয় ফারুক এবং পরে শাহরিয়ারকে। একই মঞ্চে দূরত্ব রেখে দুজনকে পাশাপাশি দাঁড় করানো হয় পাটাতনের ওপর আর ঝুলন্ত রশির নিচে। বেঁধে ফেলা হয় দুজনের পা। জল্লাদ কালু এসে গলায় রশি পরিয়ে দেয় দুই বন্দির গলায়। তার পাশে এসে দাঁড়ায় অন্য দুই জল্লাদ শাহজাহান ও হাফিজ। গলার রশি পরখ করে দেখেন সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুল ইসলাম। এরপর তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান।
ফাঁসির মঞ্চের সারিবদ্ধ চেয়ারে সবাই বসে। শুধু এক হাতে লাল রঙের রুমাল, আরেক হাতে ঘড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুল ইসলাম। উপস্থিত সবার দৃষ্টি মঞ্চের দিকে। জল্লাদ কালুর দৃষ্টি জেল সুপারের হাতের রুমালের দিকে আর জেল সুপারের দৃষ্টি তাঁর হাতে ধরে রাখা ঘড়ির দিকে। পিন পতন নীরবতা।
এভাবেই ঘড়িতে রাত ১২টা ৫ মিনিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেল সুপার তাঁর হাতে থাকা রুমাল ফেলে দেন মাটিতে। রুমাল পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মঞ্চের লিভার টেনে ধরে জল্লাদ কালু। একটি লিভার টানতেই পাটাতন সরে যাওয়ায় ঝুলে পড়ে ফারুক আর শাহরিয়ার। ঝরে গেল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দুই ঘাতক। এভাবেই ঝুলতে থাকে আধা ঘণ্টা। এরপর অবশিষ্ট ৯ জন জল্লাদ এসে তাদের দুজনের লাশ নামিয়ে স্ট্রেচারে উঠিয়ে নেমে যায় মঞ্চ থেকে। লাশ রাখা হয় মঞ্চের অদূরে রাখা চৌকিতে। সিভিল সার্জনকে সঙ্গে নিয়ে তিন কারা চিকিৎসক যান সেখানে। মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর শুরু হয় ময়নাতদন্ত।
রাত ১২: ৩০ : একদিকে চলছে ময়নাতদন্ত, আরেক দিকে তখন সব প্রক্রিয়া শেষ করে মঞ্চের দিকে আনা হচ্ছে যমটুপি পরা অবস্থায় বজলুল হুদা আর ল্যান্সার মহিউদ্দিনকে। তাদের দুজনকেও যেন অনেকটা টেনে-ঠেলেই মঞ্চে আনা হয়। জল্লাদরা বন্দিদের দুই হাত ধরে আছে দুপাশ থেকে। মঞ্চে প্রথমে ওঠানো হয় বজলুল হুদা, পরে ল্যান্সার মহিউদ্দিনকে। পুরো সময়ই দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন ইমাম মনির হোসেন। আগের মতোই আবারও পিন পতন স্তব্ধতা। রাত যখন ১২টা ৩৫ মিনিট, তখনই আবার সেই লাল রুমালের পতন। কালুর লিভার টানা। সঙ্গে সঙ্গে পতন আরো দুই ঘাতকের। লাশ নামানোর পর শুরু হয় ময়নাতদন্ত। এখন রইল বাকি এক। মহিউদ্দিন আর্টিলারি।
রাত ১২: ৫০ : মঞ্চে পিন পতন স্তব্ধতা চললেও ৪ নম্বর কক্ষ থেকে ভেসে আসছে টানা চিৎকার_'আমি ঘাতক নই, বাবা। আমাকে ছেড়ে দাও, বাবা। বাবা, তোমাদের পায়ে পড়ছি, আমাকে ফাঁসি দিয়ো না। আমি কোনো অন্যায় করিনি, বাবা।' 'বাবা বাবা' বলেই বেশি চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। চিৎকার করছিল মহিউদ্দিন আর্টিলারি। তাকে অনেকটা পাঁজাকোলা করেই মঞ্চে আনা হয়। (জানা যায়, সে কিছুটা অসুস্থ ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, দেহের এক পাশ কিছুটা প্যারালাইসিস ছিল আর্টিলারি মহিউদ্দিনের। তবে কারা সূত্র এই অসুস্থতার কথা স্বীকার করেনি। মঞ্চে আনার পরও ছটফট করছিল সে। বসে পড়ে পাটাতনের ওপর। সেখানেও চিৎকার করতে থাকে।
রাত ১টা ৫ মিনিটে জেল সুপারের হাত থেকে পড়ে যায় সেই লাল রুমাল। সচল হয় কালু জল্লাদের হাত। ঝুলে পড়ে মহিউদ্দিন আর্টিলারি।
এক ডজন জল্লাদ : এই পাঁচ ফাঁসি কার্যকর করতে তিন জল্লাদ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এরা হচ্ছে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ঢাকার কালু মিয়া। এর আগে সে আরো সাতটি ফাঁসি কার্যকর করেছে। আরেকজন নরসিংদীর শাহজাহান ভুইয়া। হত্যা মামলায় সে ৪২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। এর আগে সে আরো ১৭টি ফাঁসি কার্যকর করেছে। শেষ দলনেতা গাজীপুরের হাফিজ। সে হত্যা মামলায় ৪৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। এর আগে আরো সাতটি ফাঁসি কার্যকর করেছে। বাকি ৯ জন হচ্ছে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাসুম (আগে আরো দুটি ফাঁসি কার্যকর করেছে), কামরুজ্জামান (এই প্রথম), তানভির হাসান রাজু (আগে আরো চারটি কার্যকর করেছে), আবুল (৫০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত, এই প্রথম), মোয়াজ্জেম (এই প্রথম), মনির হোসেন (এর আগে আরো দুটি কার্যকর করেছে), জালাল ব্যাপারী (এই প্রথম), শেখ সানোয়ার (এই প্রথম) ও বাবুল আলী (এর আগে আরো দুটি ফাঁসি কার্যকর করেছে)।
সেই কক্ষগুলো এখন : বন্দি না থাকলেও কক্ষগুলো তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষে বন্দিদের বই, কাগজপত্র ও নিত্যব্যবহারের যেসব সরঞ্জাম ছিল, সেগুলো ব্যাগে ভরে যার যার কক্ষের মেঝেতে রাখা হয়েছে। কারা সূত্র মতে, এগুলো পরে ওয়ারিশদের কাছে ফেরত দেওয়া হবে।
কার কেমন আচরণ ছিল : গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা আর কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বন্দিদের নানা আচরণের কথা। ফিরোজ নামের একজন কারা ফার্মাসিস্ট জানান, শাহরিয়ার আর ফারুক দুজনই মজার মজার কথা বলে রক্ষীদের সঙ্গে হাসি-রহস্য করত। তাঁকে দেখলেই বলত, কী খবর, ফিরোজ সাঁই? কেমন আছেন? মহিউদ্দিন আর্টিলারি প্রায় প্রতিদিনই রোজা রাখত। নামাজ পড়ত নিয়মিত। কারারক্ষীদের অনুরোধ করত নামাজ পড়ার জন্য। রক্ষীদের হাতে সে অনেকটা জোর করেই তসবি তুলে দিত। দাড়ি রাখতে বলত সবাইকে। বলত, যারা বিয়ে করেনি, তারা দাড়ি রাখলে ভবিষ্যতে সুন্দর বউ পাবে।
অন্য একাধিক সূত্র মতে, শাহরিয়ার ছিল কিছুটা কড়া মেজাজের। কাপড় ধুয়ে শুকানোর জন্য মেলে দেওয়ার পর বা ঘরে এসে কেউ তার কাপড় স্পর্শ করলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত। এমনকি এসব নিয়ে কারা কর্মকর্তা বা চিকিৎসকদের সঙ্গেও উচ্চবাচ্য করত।
কর্নেল ফারুক প্রচুর বই পড়ত। তার ঘর ছিল যেন ছোটখাটো একটা লাইব্রেরি। মারা যাওয়ার কদিন আগেও আত্দীয়স্বজন তার সঙ্গে দেখা করে প্রচুর বই দিয়ে যান। এসব বইয়ে কেউ হাত দিলে সে রেগে যেত।
চিকিৎসকরা বলেন : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন মো. শামসুদ্দীন, মেডিক্যাল অফিসার রথীন্দ্রনাথ কুণ্ডু ও মেডিক্যাল অফিসার রফিক আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দিদের কেউ তাঁদের সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করেনি। কারো বড় ধরনের কোনো অসুখ ছিল না। গত ১৯ তারিখের পর থেকে তাঁরা ছয় ঘণ্টা পর পর গিয়ে এই পাঁচ বন্দির খোঁজখবর নিতেন। ফাঁসির রাত ১১টার দিকে তাঁরা এই বন্দিদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা স্বাভাবিক ছিল। তবে রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেসারের সিস্টোলিক হিসাবটা কিছুটা বেশি ছিল। চিন্তার কারণে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ঢাকার সিভিল সার্জন মুশফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে তাঁরা প্রথমে সার্ভাইক্যাল ভারটিব্র্যাক এবং স্পাইনাল কর্ড কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এর পরপরই ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ লিখে সনদপত্র দেন।
কারা কর্মকর্তা বলেন : কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে কথা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'খুবই স্বাভাবিক আর সম্পূর্ণ কারা বিধিমতেই পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তবে আর্টিলারি মহিউদ্দিন কিছুটা সমস্যা করার চেষ্টা করেছে। এর আগেও আমি একাধিক ফাঁসি কার্যকর করেছি। তবে এই পাঁচ বন্দির কাছ থেকে মৃত্যু কার্যকর করার ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা পেয়েছি, আগে কখনো সে রকম পাইনি। বন্দি হিসেবেও তারা যথেষ্ট শান্ত ছিল।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন